এ জগৎ তোমার নয় | পর্ব-৭
পর্ব-৭
৫.
বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসেছিল দিপা। এমন সময় মোবাইলে মেসেজ ফুটে উঠলো। লেখা আছে,
“অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার আগে তোমাকে প্রথম ও শেষবারের মতো জানিয়ে দিতে চাই, কোনো ধরনের অন্যায় কৌতূহল তোমার জন্য খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তোমাকে খুব কঠিন অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে না। কোনো ভয়ঙ্কর অপরাধও করতে হবে না। তবে যে কাজ করবে, বিনিময়ে কয়েকশ’ পর্যন্ত বিটকয়েন তুমি আয় করতে পারবে। ”
ম্যাসেজটা পড়া শেষ হতেই আরেকটা চলে আসার সাউন্ড ও পেলো।সেখানে লেখা আছে, “আগামীকাল তোমার ক্যাম্পাসের পাশে যে রিসার্চ সেন্টারটি আছে, দুপুর ১২:৩৫ এ সেখানে যাবে। তোমার সাড়ে ১২টার ক্লাস কাল হবে না। সেন্টারে ম্যাথিউস বলে এক লোক তোমাকে একটি এনভেলপ দেবে। সেটি নিয়ে তুমি দু’কিলো দূরে ওডেনটোন বাস স্টপে যাবে। ১:১০ এ লাল রুমাল হাতে এক আফ্রিকান-আমেরিকান নারী সেখানে আসবে। কোনো প্রশ্ন না করে তাকে সেটি দিয়ে তুমি ক্যাম্পাসে ফিরে আসবে। আগামীকালের অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করলে তোমার ই-ওয়ালেটে ৫ হাজার ডলার যোগ হতে দেখবে।মনে রেখ, এ কাজ সফল ভাবে করলে আরও কাজ পাবে। যার পারিশ্রমিক লাখ ডলার সমপরিমাণ বিটকয়েন; আর কাজ ভুল করলে কিংবা বিশ্বাসঘাতকতায় রয়েছে চরম শাস্তি।”
দিপা এবার স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললো। অন্তত এটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তার খোঁজ-খবর নেওয়ার বিষয়ে তারা এখনও কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। ফোনে তাকে দেওয়া এই এ্যাসাইনমেন্টটাই তার প্রমাণ। তবে একেবারে নিশ্চিত হওয়াও ভুল হবে। হয়তো যেটুকু খোঁজ সে নিয়েছে তা ক্ষতিকর নয় ভেবেই তারা এবারের মতো সাবধান করে দিয়েছে। যাই হোক, এখন আগামীকালের এ্যাসাইনমেন্টা ঠিকঠাক মতো করতে হবে। তবে সামান্য কাজের জন্য ৫ হাজার ডলার? দিপার মনে খটকা লাগার পাশাপাশি কৌতূহলও বাড়লো। সেদিন ফোনে আর কোনো ম্যাসেজ পেলো না সে।
পরদিন সকাল সকাল ক্যাম্পাসে পৌঁছালো দিপা।প্রথম ক্লাসটা সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা এরপর ৩০ মিনিটের বিরতি দিয়ে দেড় ঘণ্টা করে পরপর দুটি ক্লাস হওয়ার কথা। কিন্তু দ্বিতীয় ক্লাস শেষ হতেই কলেজের কারেন্ট ফল করলো। জেনারেটর চালু হলেও সেটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল বারবার। কর্তৃপক্ষ জানালো, ইলেক্ট্রিসিটি এবং জেনারেটর ফল করায় আজকের বাকি ক্লাসগুলো আর চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। আগামীকাল জমে থাকা পড়াগুলো এডজাস্ট করে দেবেন শিক্ষকেরা। শীতল শরীরে দিপা বুঝতে পারছিল, শুধুমাত্র ওর অ্যাসাইনমেন্ট সফল করার জন্য রহস্যময় প্রজেক্টের কলা-কুশলীরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। সাড়ে ১২টার ক্লাস যে হবে না, সেটা মেসেজেই জেনেছিল সে। কিন্তু পূর্বনির্ধারিত ক্লাসটি এভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে কল্পনাতেও আসেনি তার।
সাড়ে ১২টা বাজার আগেই ক্যাম্পাসের পাশে পূর্বনির্ধারিত রিসার্চ সেন্টারে পৌঁছে গেল দিপা। দাঁড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই এক শ্বেতাঙ্গ সেখানে উপস্থিত। কিছুটা বিভ্রান্ত মনে হচ্ছিল তাকে, পাশে এসে ফিসফিসিয়ে জানতে চাইল তার নাম দিপা কিনা। জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো দিপা, ‘তুমি কি ম্যাথিউস?’ লোকটি মাথা নেড়ে জ্যাকেটের পকেট থেকে একটি এনভেলপ এগিয়ে দিল। প্যাকেট বলাই ভালো হবে। হাতে নিয়ে মনে মনে বললো দিপা। পেপারব্যাক বইয়ের সাইজ হবে। ভেতরে মনে হলো বই কিংবা কোনো ফাইল আছে। মুখ তুলে চাইতেই সে দেখলো লোকটি রাজ্যের কৌতূহলী চোখে তাকে দেখে ঘুরে হাঁটা দিল।
মোবাইলে মেসেজের শব্দে সম্বিত ফিরলো ওর। মেসেজ ওপেন করে দেখলো, তাতে লেখা আছে, “এনভেলপটা এখন তোমার হাতে। সময় মতো নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে ডেলিভারি দিয়ে এসো।”
ঘড়ি দেখলো দিপা। এখন রওনা দিলে অনেক আগেই পৌঁছে যাবে সে। তাহলে তাড়া কিসের? তারপরও বাসস্টপের দিকে এগুলো সে। কিছুক্ষণ পর ওডেনটোনের যাওয়ার বাসে উঠে পড়লো।
পরদিন খবরের কাগজে বাংলাদেশি এক তরুণীর হারিয়ে যাওয়ার খবর ছাপা হলো।প্রথম পাতার নীচের দিকে ছোট বক্সে লেখা,
“ব্ল্যাকসবার্গে ভার্জিনিয়া টেক কলেজে অধ্যয়নরত বাংলাদেশ থেকে আসা এক তরুণীকে গতকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেগুপ্তা নাসরিন দিপা নামের ঐ তরুণী গত ৬ মাস যাবত কম্পিউটার টেকনোলজি বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিল। নিখোঁজের দিন মার্থা নামের এক সহপাঠী তার সন্ধান না পেয়ে স্থানীয় পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ তার মোবাইল ট্রেস করে সবশেষ ওডেনটোনে সে গেছে বলে জানতে পারে। সেখানকার বাসস্টপে তার ব্যবহৃত স্মার্টফোনটি খুঁজে পেলেও তার সন্ধান মেলেনি। ভার্জিনিয়া পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে সেগুপ্তার নিখোঁজের বিষয়টি তদন্ত করছে। ”
(চলবে..)

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন