সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান
এ জগৎ তোমার নয় (পর্ব-৫)
পর্ব- ৫
৩.
ইউনিভার্সিটির রুমে রুমে ঘুরে টানা কয়েকটা ক্লাস শেষ করে যখন ও ক্যাম্পাসের পার্কে এসে বসলো, তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে। ক্ষুধাও লেগেছিল বেশ! ক্যান্টিন থেকে আগেই আনা খাবার আর কফির কাপটা বেঞ্চে রেখে মোবাইল পকেট থেকে বের করলো দিপা। ফোনে অনেকগুলো নোটিফিকেশন সে দেখতে পেল, তবে চোখ আটকে গেল বিশেষ সেই মেসেজে। সাথে সাথে ঘড়ির দিকে তাকালো দিপা। তাকে দেয়া পূর্ব-নির্ধারিত ৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। আর সেকারণেই তাকে মেসেজটা পাঠানো হয়েছে। তাড়াতাড়ি সে মেসেজটা ওপেন করলো। সেখানে লেখা আছে,
“অ্যানাদার ওয়ার্ল্ডে স্বাগতম। তোমাকে এই মেসেজটা পাঠানোর অর্থ হচ্ছে, এই মুহূর্ত থেকে তুমি আমাদের ভুবনের বাসিন্দা হয়ে গেছ। এখন থেকে তোমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আমাদের। বিনিময়ে তুমি যা পাবে তা কল্পনাও করতে পারবে না। তবে একটা শর্ত আছে, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের এবং কাজের সকল তথ্য গোপন রাখতে হবে। জেনে রেখ, এখন থেকে তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের নজরে থাকবে। কোনো ধরনের বিশ্বাসঘাতকতার একটাই শাস্তি। সেটা কি, তা জানার দুর্ভাগ্য তোমার হবে না। পরবর্তী মেসেজের জন্য অপেক্ষা করো।”
দিপার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো। কৌতূহলের বশে এ কি করে বসেছে সে! পাশে ফেলে রাখা খাবার ওভাবেই পড়ে রইলো। আরও একটি ক্লাস ছিল কিন্তু সেটা করার মানসিক অবস্থা তার ছিল না। অবশ শরীরটা নিয়ে সে ক্যাম্পাসের কমন ল্যাবে গেল। পুরো ঘরজুড়ে সারি সারি কম্পিউটার সাজিয়ে রাখা। জানে কাজটা ঠিক হচ্ছে না। ওর যে কোনো পদক্ষেপ যে বা যারা অনুসরণ করছে, তাদের অজানা থাকবে না। কিংবা এর পেছনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও যদি থেকে থাকে তবে প্রযুক্তির সাহায্যে সবই টের পেয়ে যাবে। সে কথা ভেবেই সাথের স্মার্টফোনটি আগে লকারে রেখে আসলো দিপা। এরপর কম্পিউটার ল্যাবের যে পাশটা সিসি ক্যামেরার আওতায় নেই, সেদিকটা বেছে নিয়ে বসলো। ডার্ক ওয়েবে ঢুকতে বেশ কিছু নিয়ম আছে। সময় নিয়ে ওয়েবের অন্ধকার জগতে প্রবেশ করলো দিপা। অনেকের হয়তো জানা নেই, অন্ধকার জগত হলেও সেখানেও সবাই যে খারাপ মানুষ, তা নয়। অবৈধ কাজের উদ্দেশ্যেই যে সবাই সেখানে বিচরণ করে তাও নয়। কিছু অজ্ঞাত ব্যবহারকারীও আছে যারা একে অপরকে সাহায্যও করে। তেমনই কিছু মানুষের সাহায্য নিয়ে অ্যানাদার ওয়ার্ল্ডের বিষয়ে সে খোঁজ খবর নিলো। ‘অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড’এ যোগ দেওয়া এমন কিছু সদস্যের অভিজ্ঞতাও সৌভাগ্যক্রমে জানতে পারলো। জেনে আশ্বস্ত হওয়া তো দূরের কথা, উদ্বেগ তাতে আরও বাড়লো।
ডার্ক ওয়েবের অন্ধকার জগতে রহস্যে ঘেরা এক ব্যক্তি তাকে জানালো, ‘অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড’ প্রজেক্টটা খুব বেশিদিন হলো লঞ্চ করেনি। ৫-৬ মাস ধরে এটি কাজ শুরু করেছে। প্রথমে ডার্ক ওয়েবে বিজ্ঞাপন দিলেও আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় ওয়াইড ওয়েবে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, যে বা যারা এই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে তারা যে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। অবশ্য জানাজানি হলে যে অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড প্রজেক্টের কিছু হবে, তাও নয়। ইন্টারনেটের জগতটা এমন যে, কেউ এখানে কর্তৃত্ব ফলাতে পারে না। মেনে নেয়া কঠিন হলেও সত্যি যে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কোনো ব্যক্তি বা দেশের সম্পদ নয়। এটির দুনিয়ার মালিক সবাই, আবার কেউ নয়। ফলে একে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা যায়(?) কিন্তু প্রতিরোধ করা যায় না। তারচেয়ে বড় কথা ডার্ক ওয়েব তো কোন ছাড়, ওয়াইড ওয়েবেও এখন প্রতি তিনটি সাইটের মধ্যে অন্তত একটিতে ম্যালওয়্যার অর্থাৎ ক্ষতিকারক কোড থাকতে পারে।
যাই হোক, ইন্টারনেটের আলোর দুনিয়ায় 'অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড' বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর ভালোই সাড়া মিলেছে। তবে আবেদন করলেই যে সবার সেখানে যোগদানের টিকিট মিলেছে তা নয়! তবে যারা যোগ দিয়েছে তাদের কারও কারও হয়েছে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। যেমন এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে জানা গেল, দু’মাস আগে ওয়েব সাইটে বিজ্ঞাপন দেখে সে আবেদন করে। সিলেক্ট হওয়ার পর তাকে দু’জন গবেষকের কাগজপত্র সংগ্রহের কাজ দেওয়া হয়। কাকতালীয় কিনা তার জানা নেই, কিন্তু সে যে আইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো সেই গবেষকেরাও সেখানেই দায়িত্বরত ছিল। সম্ভবত সেটি জেনেই অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড তাকে কাজটা দেয়। গবেষকদের অতি-গোপনীয় ফাইলগুলো যাতে সে চুরি করতে পারে সে জন্য সব রকমের তথ্যও মেসেজ আকারে দিয়ে তাকে সাহায্য করা হয়। যেমন, গবেষকেরা কখন ল্যাবে থাকে না, সিন্দুকের পাসওয়ার্ড কতো ইত্যাদি। হার্ড ফাইলের পাশাপাশি মেমোরি ড্রাইভেও ফাইলগুলোর ব্যাকআপ ছিল। রিসার্চ ফাইলগুলো চুরি করার পর তাকে বলা হয়, কাগজগুলো পুড়িয়ে ফেলতে আর মেমোরি ড্রাইভ যে কোনো কম্পিউটারে চালু করতে। কম্পিউটারে যখনই সে পেন ড্রাইভ কানেক্ট করে খুলে দেখতে যায়, দেখে সব ফাইল স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিলিট হয়ে গেছে। এতো দ্রুত তা ঘটে যে ফাইল খুলে পড়ার সময়ও সে পায়নি। তবে হার্ড ফাইল অর্থাৎ কাগজগুলো সে পুরিয়ে ফেলার আগে খুলে দেখেছিল। আর আশ্চর্য হয়ে দেখেছিল, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দুর্বলতাগুলো কি হতে পারে তা নিয়ে বেশ কিছু তথ্য ছিল সেখানে। অর্থাৎ গবেষকেরা এআই’এর ক্রমবর্ধমান উন্নতির পাশাপাশি দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের করার কাজ করছিল। সম্ভবত সে তথ্য দিয়ে এআই’কে আরও নিখুঁত করার উদ্দেশ্যই তাদের ছিল।
সে সময় দিপা প্রশ্ন করে, উদ্দেশ্য ছিল মানে? তারা এটি নিয়ে কি এখনও কাজ করছে না?
উত্তরে সেই ব্যক্তি জানায়, ফাইলগুলো নষ্ট করে ফেলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই দুই গবেষকের একজন ব্রেন স্ট্রোকে এবং অপরজন ফুড পয়জেনিং’এর কারণে মারা যায়। দুটো মৃত্যুই এতো স্বাভাবিক ছিল যে, পুলিশি তদন্তের কোনো দরকারই হয়নি। একই সঙ্গে ঐ লোকটি এটাও জানায়, পেমেন্ট মেটানোর পর গতকাল থেকে ‘অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড’ তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। কেন যেন তার মনে হচ্ছে, সে যে চুরি করা ফাইলগুলো পড়ে ফেলেছে তা তারা জেনে গেছে। ফলে সে নিজেও কেন যেন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। লোকটি আরও জানায়, সে নিজেও ফাইলগুলো পড়ে সন্দেহ হওয়ায় ডার্ক ওয়েবে খোঁজ-খবর নিয়ে ক’দিন আগে জেনেছে যে অ্যানাদার ওয়ার্ল্ডে রিক্রুট হওয়া কারও সঙ্গে যদি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তা খুবই খারাপ লক্ষণ। এমন বেশ কয়েকজনের কথা জানতে পেরেছে সে।
দিপা জানতে চায়, কি পরিণতি হয় তাদের? লোকটি জানায়, হয় সেই ব্যক্তি নিখোঁজ হয়ে যায় অথবা আপাত দৃষ্টিতে তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়।
(চলবে)
এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন