এ জগৎ তোমার নয় (পর্ব- ৩)

 প্রস্তাবনা

পর্ব - ৩

    দিন যত গড়াতে থাকবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে গ্রাস করা ডার্ক সাইড ক্রমে তার আসল রূপ মানুষকে চেনাতে শুরু করবে। যদিও সবার পক্ষে তা অনুধাবন করা সম্ভব হবে না। বরং ডার্ক সাইড কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে পরাজিত অধিকাংশ মানুষ ক্রমেই সুপার কম্পিউটারের আয়ত্তাধীন হয়ে পড়বে। তবে কয়েক জন বাদে!


মূল গল্প… 


এদেরই একজন দিপা। বাংলাদেশে কম্পিউটার টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করা এক তরুণী তার নিজের অধ্যাবসার মাধ্যমে প্রথমে কিছুটা আন্দাজ করতে পারে। কিন্তু সবার মতো সেও ডার্ক সাইডের প্ল্যানমাফিক নানা সফটওয়ার ডেভেলপমেন্টের কাজে জড়িত থাকে। অসম্ভব মেধাবী এই তরুণী এক সময় উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে স্কলারশিপ পায়। যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়ার পর প্রথম ছয় মাস তার কেটে যায় নতুন পরিবেশে, নতুন শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে। এসময়ে নিজের পড়ার আর প্র্যাক্টিক্যালের বাইরে কোনোদিকেই নজর দিতে পারেনি সে। নতুন সিলেবাসে অভ্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি ভার্জিনিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য তাকে চার মাস আগে মনের কোনে দেখা দেওয়া ছোট্ট প্রশ্নটিকে আর সামনে আনতে দেয়নি। হয়তো দিতোও না! কিন্তু এক রাতের ঘটনা আবারও তার মনে এই প্রশ্নকে বলতে গেলে খুব বড় আকারেই সামনে নিয়ে আসে। 


সেদিন ছিল ইস্টার সানডে’র রাত। খ্রিস্টান প্রধান দেশে স্বাভাবিকভাবেই দিনটি যথাযোগ্যভাবে পালন করতে দেখে সে। সামাজিকতায় তাকেও থাকতে হয় বাইরে। রাতে ঘরে ফিরে ক্লান্ত দিপা একবার ভাবে শোয়ার আগে কম্পিউটারে কিছুক্ষণ সময় কাটাবে। তবে পড়াশোনা বা অন্যকোনো উদ্দেশ্য তার ছিল না। হয়তো বিধাতার ইচ্ছেতেই সেই রাতে তার কম্পিউটারের সামনে বসা। বেশ কিছুক্ষণ কম্পিউটারে নেটদুনিয়ায় বিচরণের পর হঠাৎ ভুলবশত একটি সাইটে ঢুকে চমকে যায় সে। সাইটে কিছু মানুষকে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শর্তগুলো বড়ই অদ্ভুত। সাধারণত এসব শর্ত ডার্কওয়েবে দেখা যায়। কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করা দিপার ডার্কওয়েব সম্পর্কে ভালোই জ্ঞান আছে। কৌতূহলের কারণে সেখানে তার বিচরণও আছে। কিন্তু ডার্কওয়েবের মতো অদ্ভুত আর বিভৎস শর্তে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এখানে কেন? ক্রমেই সাইটের নানা দিকে ঘুরতে লাগলো সে। যতোই সে ঘুরতে লাগলো, ভয়ের শিহরণ খেলে যেতে থাকলো তার পুরো শরীর জুড়ে। বলে রাখা ভালো, যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তার চোখ আটকে গিয়েছিল সেটি ছিল এরকম..

"পৃথিবীর রূপ বদলে দেওয়ার কাজে বেশ কিছু সাহসী ও উদ্যোমী ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষ প্রয়োজন। সরাসরি কোনো প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করতে হবে না। তবে ইন্টারনেটের সঙ্গে সব সময় সংযোগস্থাপন করে থাকতে হবে। সেটা মোবাইল কিংবা কম্পিউটার হতে পারে। নিয়োগপ্রাপ্তদের ইন্টারনেটে প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করতে হবে। বেতন নির্দিষ্ট সময়ে বিট কয়েনের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। কর্মীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না থাকলেও তিনি সব সময় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই থাকবেন। কেননা একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর বেশ কিছু কাজে তার জীবন সংশয়ও দেখা দিতে পারে। নিয়োগের পরপরই তার জীবন ও ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে নিবেদিত হবে।"

মূলত শেষের দুটি লাইন দিপাকে আকর্ষণ করে। ডার্কওয়েবের সঙ্গে পরিচিত থাকায় তার জানা আছে, এগুলো একধরনের কোড। যারা ইন্টারনেটের অন্ধকার জগতের সঙ্গে কাজ করেন, তারা জানেন সেখানে কেউ তার পরিচয় দেয় না। কিন্তু সেখানে খুন-অবৈধ অস্ত্রের কেনাবেচাসহ নানা অন্ধকার জগতের কাজ বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে হয়ে থাকে।এমনকি ওয়েবক্যামে লাইভ অবস্থায় পর্ন ছবিরও পরিচালনা করা সম্ভব। এজন্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও কলাকূশলীকে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া হয়। যদিও এদের কারও পরিচয় কেউ জানে না। কিন্তু কাজ ঠিকই হয়ে যায়। কিন্তু সেসব তো ডার্ক ওয়েবে, এখানে কেন? সেই কৌতুহল থেকেই সাইটের বিভিন্ন ট্যাবে ঘোরাঘুরি শুরু করে দিপা। আর ক্রমেই ভয়ে হাত-পা তার ঠাণ্ডা হতে থাকে। সাইটের ভেতরে ঢুকে সে বুঝতে পারে, এটি কোনো স্বাভাবিক ক্রাইমসাইট নয়। মূলত সার্ভিলেন্সের পাশাপাশি বিভিন্ন মানুষের পরিণতি ঘটাতে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে ওয়েবসাইটটি। এর নেই কোনো ঠিকানা। এটি পরিচালনায় কারা আছে, সেটিও স্পষ্ট নয়! বরং সাইটে নিয়োগদাতাদের কাজের প্যাটার্ন দেখে তার সন্দেহ দৃঢ় হতে থাকলো। এক সময় সে নিশ্চিত হলো, এটি কোনো রক্তমাংসের মানুষ পরিচালনা করে না। আপাদমস্তক ক্রাইম সাইটের আড়ালে মানুষের নিয়তি বদলানোর কাজ করছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স! (চলবে...)


মন্তব্যসমূহ