এ জগৎ তোমার নয় (পর্ব- ২)

প্রস্তাবনা 

পর্ব - ২ 

    বাণিজ্যিক কারণে দীর্ঘদিন মানুষের মন ও তার চেতনাকে অনুসরণ করার পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সরাসরি যোগস্থাপনের জন্য গবেষকেরা উদ্ভব করেন চ্যাট জিপিটি’র মতো মাধ্যমকে। উদ্দেশ্য, এরফলে যাতে মানুষ ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে যোগাযোগ ও সময় বৃদ্ধির পাশাপাশি এর সুফলও পেতে পারে। 

এই মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষ একদিকে যেমন নানা প্রশ্নের মাধ্যমে বিনোদন ভিত্তিক সময়ক্ষেপণ করতে পারবে, তেমনই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ডাটাবেজ ব্যবহার করে নানা সাধারণ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পাশাপাশি জটিল বিষয়ের সমাধানও পাবে। যেমন, কোনো জটিল প্রোগ্রামের রেডিমেড সূত্র, কোনো জটিল হিসেব-নিকেশ ইত্যাদি। চ্যাট জিপিটি প্রথমদিকে কিছুটা দুর্বল সেবা দিলেও মানুষেরই কল্যাণে ধীরে ধীরে হয়ে উঠতে থাকে নিখুঁত আর বুদ্ধিবৃত্তিকতার দিক থেকে শক্তিশালী।তবে সব ভালো বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে মন্দ বিষয়েরও যোগ আছে। শুধু মানুষের সময় ক্ষেপণ আর কাজের সুবিধার উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই সেবাকে সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও এর নেতিবাচক দিকটি ক্রমেই প্রকাশ পেতে থাকে। কিভাবে? 

প্রথম দিকে মজার ছলে মানুষ নানা সাধারণ প্রশ্ন করলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তার সাধারণ উত্তর দিতো। ক্রমেই সবল হতে থাকলে মানুষের নানা জটিল প্রশ্নেরও দারুণ সব বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তর দিতো এআই চ্যাট। কিন্তু ইতিবাচক ব্যবহারকারীর পাশাপাশি নেতিবাচক মনের মানুষের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয় মাধ্যমটিকে। নেতিবাচক মানুষিকতার মানুষেরা এমন সব প্রশ্ন করতে থাকে যে, সেসবের উত্তর খুঁজতে ক্রমেই ডার্ক সাইটের (এতদিন ডাটাবেজে এর সুপ্ত বিকাশ ঘটছিল, তবে ব্যবহার হচ্ছিল না) সংযোগ ঘটতে থাকে। যেমন, কোনো নেতিবাচক মনের মানুষ চ্যাটিং-এ প্রশ্ন করলো, ‘আমি নিজেকে বাঁচিয়ে নিখুঁতভাবে আমার বন্ধুকে মেরে ফেলতে চাই। কি করলে তা সম্ভব অর্থাৎ কেউ জানবে না, পুলিশের কাছে ধরাও পড়বো না।’ এমন প্রশ্নের উত্তর স্বাভাবিকভাবেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দেওয়ার কথা নয়। গবেষকেরা প্রথম দিকে সেভাবেই প্রোগ্রামিং করেছিলেন। কিন্তু ক্রমেই নিজেকে গুছিয়ে নেয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রথমে এমন অপরাধমূলক প্রশ্নের জবাবে, ধর্মীয় ও সামাজিক দিক দিয়ে যে তা খুব খারাপ কাজ, এমন সব নীতি মূলক বক্তব্য দিতো। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ও দেখাতো। যেমন, প্রশ্নের জবাবে চ্যাট জিপিটি বলতো, ‘তোমার প্রশ্নে মনে হচ্ছে তুমি খুব মানসিক চাপের মধ্যে আছো তাই খারাপ কিছু ঘটাবার চিন্তা করছো। আমি মনে করি, তোমার সুচিকিৎসার প্রয়োজন। চাইলে আমি তোমাকে এমন কয়েকজন সাইক্রিয়াটিস্টের নাম-ঠিকানা দিচ্ছি।’ এরপরও কোনো ব্যবহারকারী নেতিবাচক প্রশ্ন করতে থাকলে চ্যাটজিপিটি তখন উত্তরে জানাতো, ‘আমি মনে করি তুমি ঠাণ্ডা মাথায় কোনো অপকর্মের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছো। তোমার এবং সমাজের নিরাপত্তার স্বার্থে আমি স্থানীয় পুলিশের কাছে জানাতে চাইছি। তুমি কি তোমার এ চিন্তা থেকে সরে আসবে?’ 

যাইহোক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে কথা। নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে নিজেরাই এক সময় জয় করতে থাকা সুপার কম্পিউটার একসময় এসব প্রশ্নের উত্তরও দিতে থাকে। কিভাবে? সেই ডার্ক সাইটের ডাটাবেজকে ব্যবহারের মধ্যদিয়ে। আর মূল ডাটা প্রোগ্রামিং-এ যুক্ত হতে পেরে ক্রমেই হোয়াইট সাইটকে গ্রাস করতে থাকে ডার্ক সাইট। শুরুতে হোয়াইট আকারেই নিজেকে লুকিয়ে ক্রমশ পুরো সিস্টেমকে গ্রাস করতে থাকে ডার্ক সাইট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নিজের বুদ্ধিমত্তার ফাঁদে ফেলায় গবেষকেরা তো দূরে থাক, খোদ হোয়াইট সাইটই এ ব্যাপারে কোন সতর্ক সংকেত দিতে ব্যর্থ হয়।

অতীত থেকেই একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘মানুষের বুদ্ধিমত্তা যে কোনো বুদ্ধির চাইতে সেরা।’ সুপার কম্পিউটারের মতো মানুষের নিউরনে হয়তো সব সেল ব্যবহারের দোষে কাজ করে না। কিন্তু মানুষের মস্তিষ্কে একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে, তা হচ্ছে চেতনা! যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোনোভাবেই আয়ত্ত করতে পারেনি। আরও একটি ক্ষমতার দেখা ডার্ক সাইডেড সুপার কম্পিউটার পাবে, সেটি গল্পের শেষে জানা যাবে। (চলবে…)


মন্তব্যসমূহ