এ জগৎ তোমার নয় (পর্ব ৪)
সাইটটিতে খুব বেশিক্ষণ হয়নি সে ঘোরাফেরা করছিল। একসময় তার মনে হলো, নিয়োগে সাড়া না দিলে তার আইপি তো এআই’এর জানা হয়ে যাবে, সন্দেহ করবে। তাই কৌশল করেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির একটি পদে সে আবেদন করে ফেললো।
সাইটটিতে ঘোরাফেরার সময় সে দেখেছিল, মূলত দু’ভাগে সাইটটি সাধারণ মানুষকে নিয়োগ দিয়ে থাকে। প্রথমটি বেসামরিক লোক, যারা তাদের বিভিন্ন পেশার সংশ্লিষ্ট মেধা দিয়ে এখানে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে গোপনে কাজ করে। অপর অংশটি সামরিক। এদের মধ্যে অধিকাংশই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কিংবা সাধারণ সদস্য। কিন্তু এই দুই অংশের কাজ কি? সাইটে গোপনীয়তার কারণে তেমন কিছুই দেয়া হয়নি। তবে প্যাটার্ন দেখে দিপা আন্দাজ করে মূলত এক পক্ষ মানুষের কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করে উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করে থাকে। আর অপর পক্ষ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রয়োজনীয় সহিংস কাজগুলো করে থাকে। কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের সাপোর্ট দেয়ার কাজটাও করে থাকে এই অংশটি। প্রয়োজনে অপর অংশের সহযোগিতাও নেয়া হয়। কিন্তু এই দুই অংশের কি কাজ, তা স্পষ্ট করে বুঝতে পারলো না দিপা। শুধু এতটুকুই বুঝতে পারলো, কোনো মানুষ বা মানুষের সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান এই প্যাটার্নে কাজ করতে পারে না। তাহলে এর পেছনে আসলে কারা রয়েছে? যদি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সই হয়ে থাকে, তাহলে কেন মানুষের সাথে এমন পদক্ষেপ নেবে? বিস্তারিত জানার জন্য ডার্ক ওয়েবে যাওয়া প্রয়োজন মনে করলো দিপা। কিন্তু ক্লান্তি তাকে আর বসে থাকতে দিলো না। তাছাড়া ডার্ক ওয়েবে সার্ভিলেন্সের কাজ বাসায় করা নিরাপদ নয়। পরদিন কোনো এক ফাঁকে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে ভেবে শুয়ে পড়লো।
দিপা যখন ঘুমোচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তখন দিপার বায়োডাটার তথ্য নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। পছন্দসই প্রার্থী পেলে তাই করা হয়। যেমনটা করা হয়েছে অন্যদের ক্ষেত্রে। সবার অজান্তে ডার্ক সাইট এক বিশেষ বাহিনী গড়ছে। কৌতূহলবশত দিপা সেখানেই টোকা দিয়ে ফেলেছে।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলে তার নজরে পরলো মোবাইলের স্ক্রিনে একটি মেসেজ ফুটে রয়েছে। সেই সাইট থেকে পাঠানো। ঘুম চোখেই মেসেজটি খুললো দিপা। সেখানে লেখা রয়েছে, “অভিনন্দন, অ্যানাদার ওয়ার্ল্ডে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের বিশেষ কাজে অংশগ্রহণ করতে চেয়ে যে আবেদন আপনি করেছেন তা গৃহীত হয়েছে। আজকের মধ্যেই আপনাকে প্রদেয় সুযোগ-সুবিধাসহ কাজের দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করা হবে। নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করুন। যদি আপনি ভুলবশত আবেদন করে থাকেন তবে মেসেজ দেখার পরবর্তী ৫ ঘণ্টার মধ্যে জানিয়ে দিন। মনে রাখবেন, এরপর সিদ্ধান্ত বাতিলের কোনো সুযোগ পাবেন না।”
চোখ থেকে ঘুম উবে গেল দিপার। বিছানায় উঠে বসে রিপ্লাইতে লিখলো, ‘আগে সুযোগ-সুবিধা আর দায়িত্ব সম্পর্কে জেনে তারপর সিদ্ধান্ত জানালে হতো না?’
প্রায় সাথে সাথেই ফিরতি মেসেজ আসলো। সেখানে লেখা, ‘নিয়ম নেই। তবে সুযোগ-সুবিধা যা আপনাকে দেওয়া হবে তা আপনার কল্পনারও বাইরে। আপনি চাইলে এখনই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন। এরপর চাইলেও আর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন না। আপনার সঙ্গে ৫ ঘণ্টার পর যোগাযোগ করা হবে।’
সকালে ক্লাশ ছিল, তাই চটপট উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো দিপা। খাবার ক্যাম্পাসেই করে, তাই বাড়তি সময় নষ্ট না করে ছুট দিলো।
(চলবে…)

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন